রাজনীতি

গ্যাস নিয়ে `যুদ্ধে` নামতে যাচ্ছে রাশিয়া : জেলেনস্কি

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২৬ জুলাই ২০২২;  আপডেট: ০১:১৯, ২৯ অক্টোবর ২০২২

গ্যাস নিয়ে `যুদ্ধে` নামতে যাচ্ছে রাশিয়া : জেলেনস্কি

রাশিয়া যে-কোনো সময় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা জানিয়েছিলো ইউরোপিয় কমিশন।

রাশিয়া এবার ইউরোপের বিরুদ্ধে 'গ্যাস নিয়ে যুদ্ধ' শুরু করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

রাশিয়ার জ্বালানি উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম গতকাল সোমবার জানিয়েছে, 'নর্ড স্ট্রিম ১' পাইপলাইনে মেরামত কাজের জন্য উৎপাদনের পরিমাণ আবারো কমানো হবে। এ লাইনের মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। উৎপাদন কমানোর কারণে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণও কমবে।

গ্যাজপ্রমের এ ঘোষণার পর সোমবার রাতে জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন, এটি ইউরোপের বিরুদ্ধে রাশিয়ার 'গ্যাস ব্ল্যাকমেইল' ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে জার্মান সরকারও বলছে, কারিগরি কোনো সমস্যার কারণে গ্যাস সরবরাহ কমানোর কোনো কারণ নেই। দেশটির মতে, প্রকৃতপক্ষে গ্যাজপ্রমের কারিগরি কোনো সমস্যা নেই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ পাইপলাইন দিয়ে সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে মেরামতের কারণ দেখিয়ে টানা ১০ দিন এ পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখে গ্যাজপ্রম। এতে ইউরোপজুড়ে স্থায়ীভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার আশঙ্কা তৈরি হয়। ৫ দিন আগে ওই লাইন দিয়ে আবারো সরবরাহ শুরু হলেও এর পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, 'এই গ্যাস ব্ল্যাকমেইল ইউরোপকে ক্রমশই কঠিন অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার মতো একটি সন্ত্রাসী দেশ এভাবে ইউরোপের জনজীবনকে দিন দিন কঠিনতর করে তুলছে।' জেলেনস্কি আরো বলেছেন, রাশিয়া ইচ্ছে করেই এমনটি করছে। গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কারণে ইউরোপের মানুষ শীতের জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে পারছে না এবং এ কারণে শীতের সময় ওই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।

ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো গত বছর তাদের মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ পায় রাশিয়া থেকে। ইউরোপিয় ইউনিয়নও অভিযোগ করেছে, সরবরাহ ঘাটতি তৈরি করার মাধ্যমে জ্বালানিকে রাশিয়া একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই অঞ্চলের নেতারা পরবর্তী ৭ মাসে দেশগুলোতে শক্তি ব্যবহারের হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার কথাও ভাবছেন। গত সপ্তাহে ইউরোপিয় কমিশন এ প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব মানা বা না মানার বিষয়টি সদস্য দেশগুলোর জন্য ঐচ্ছিক হলেও যে-কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিশন তা দেশগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করতে পারে বলেও জানানো হয়।

রাশিয়া যে-কোনো সময় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে বলে বেশ কয়েকদিন আগেই আশঙ্কা জানিয়েছিলেন ইউরোপিয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন।

এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইউরোপের জ্বালানি মন্ত্রীদের এক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। বর্তমান সমস্যা মোকাবেলায় এ বৈঠকে তাদের মধ্যে কার্যকর কোনো চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছেন নেতারা।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর বিশ্বজুড়ে গ্যাসের দাম বাড়ে বহুগুণ। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হওয়ার প্রভাবে গ্রাহক পর্যায়েও জ্বালানি ব্যবহারের খরচ বেড়ে যায়। সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সবাই রাশিয়াকে দোষারোপ করলেও ক্রেমলিন বরাবরই দেশটির বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর 'নিষেধাজ্ঞা'র বিষয়টিকে দায়ী করে এসেছে।

সূত্র : বিবিসি।