রাজনীতি

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণ

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২;  আপডেট: ০১:১০, ২৯ অক্টোবর ২০২২

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণ

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জ্যামাইকাসহ ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন রানি এলিজাবেথ।

সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী রাজশাসক ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সাত দশক সিংহাসনে থাকাকালে ইতিহাসের বহু পর্বের সাক্ষি হয়েছেন তিনি। ব্রিটেনসহ পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক ঘটনারই পট পরিবর্তনে তার ছিলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যালমোরাল প্রাসাদে মারা গেছেন তিনি ৯৬ বছর বয়সে। তার মৃত্যুর পর বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা মন্তব্য করেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইতিহাস যেন একটা জায়গায় এসে থেমে গেল।

গতকাল সন্ধ্যার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দেয় বাকিংহাম প্যালেস। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন রানি। তার হাঁটাচলা ও দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছিল।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে বাংলাদেশে আজ শুক্রবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জ্যামাইকাসহ ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন রানি এলিজাবেথ। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসকরা রানির স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা জানালে তার পরিবারের সদস্যরা স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল প্রাসাদে জড়ো হয়েছিলেন। ওই প্রাসাদেই গ্রীষ্মের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন তিনি।

রানির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষ রাজপ্রাসাদ ও চার্চগুলোর সামনে জড়ো হয়েছেন ফুল নিয়ে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি জনসাধারণও ব্যক্তিগতভাবে শোক জানিয়েছেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। দেশটির ধর্মীয় নেতা আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি জাস্টিন ওয়েলবি রানির মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বলেছেন নতুন রাজা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্যে তিনি প্রার্থনা করছেন।

কালের সাক্ষি

রানি এলিজাবেথের পুরো নাম আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি সিংহাসনে আসীন হন। পরবর্তী ৭০ বছরে ব্রিটেনের বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষি হয়েছেন তিনি। এসব পরিবর্তন সামলেছেন তিনি গভীর প্রজ্ঞা দিয়ে। শুধু ব্রিটেন নয় বরং গোটা বিশ্বে এই সময়ে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন রানি এলিজাবেথ। নিজ দেশের ও বিশ্বের ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনা ও অস্থির সময়ে তার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মেয়াদকালে মহাযুদ্ধ-পরবর্তী কৃচ্ছ্রসাধন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথে উত্তরণ, স্নায়ুযুদ্ধের পরিসমাপ্তি এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের যোগদান ও পরে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৭৪ সালে জন্মগ্রহণকারী উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে তার ১০১ বছর পর ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণকারী লিজ ট্রাসসহ মোট ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবদ্দশায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত মঙ্গলবার রানি কর্তৃক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন লিজ ট্রাস। রানির মৃত্যুতে তিনি বলেছেন, রানি এলিজাবেথ হলেন 'আধুনিক ব্রিটেনের ভিত্তিপ্রস্তর'। তিনি আরো বলেছেন, 'আমাদের যে স্থিতিশীলতা ও শক্তি দরকার ছিলো, তিনিই (রানি এলিজাবেথ) সবসময় তা জুগিয়েছেন।'

সিংহাসনে আরোহন করেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস

রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করেছেন এবং কমনওয়েলথভুক্ত ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান হয়েছেন।

মায়ের মৃত্যুর পর তিনি বলেছেন, এ ঘটনা তার ও পরিবারের সদস্যদের জন্যে অত্যন্ত বেদনার। যুক্তরাজ্য এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোসহ সারা বিশ্বের মানুষ রানি এলিজাবেথের অভাব অনুভব করবে।

প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস নতুন রাজাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, 'আমরা তার (রাজা তৃতীয় চার্লস) প্রতি আমাদের বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য প্রকাশ করছি, ঠিক যেভাবে তার মা জনগণের প্রতি সুদীর্ঘকাল ধরে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন।' তিনি বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুগের অবসানের পর ব্রিটেন এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে এবং তিনি (এলিজাবেথ) যেমনটি চেয়েছিলেন, ব্রিটেন ঠিক তেমনই একটি দেশ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় রানির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, "আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং প্রার্থনা শোকাহত রাজ পরিবারের সদস্য এবং যুক্তরাজ্যের শোকাহত জনগণের সাথে রয়েছে এবং আমরা মহামান্যের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি ও পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করছি।"

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, রানি শুধু কমনওয়েলথভুক্ত ২৫০ কোটি মানুষের স্তম্ভ এবং শক্তি ছিলেন না, বরং তিনি করুণা, মর্যাদা, প্রজ্ঞা এবং সেবারও প্রতীক ছিলেন।

সূত্র : বিবিসি, সিএনএন ও প্রথম আলো।