রাজনীতি

এক্সিট পোল : ইতালির নির্বাচনে জিততে চলেছেন ডানপন্থী জর্জিয়া মেলোনি

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২;  আপডেট: ০১:০৮, ২৯ অক্টোবর ২০২২

এক্সিট পোল : ইতালির নির্বাচনে জিততে চলেছেন ডানপন্থী জর্জিয়া মেলোনি

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে আগের কঠোর অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা সরে এসেছেন জর্জিয়া মেলোনি। ছবি : রয়টার্স।

ইতালিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপের ফল (এক্সিট পোল) অনুযায়ী ভোটে জিতেছেন কট্টর ডানপন্থী নেতা জর্জিয়া মেলোনি। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মেলোনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী এনরিকো লেত্তার থেকে ২২-২৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। সব হিসাব ঠিক থাকলে ডানপন্থী ব্রাদার্স অব ইতালি দলের প্রধান মেলোনিই হতে পারেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। মেলোনি ক্ষমতায় এলে দেশটিতে একনায়ক মুসোলিনির পর তিনিই হবেন দেশটির ক্ষমতায় আসা প্রথম কোনো ডানপন্থী নেতা।

বুথ ফেরত জরিপের বিষয়টি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়, তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মেলোনিই প্রথম ইতালির কট্টর ডানপন্থী সরকার গঠন করবেন। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, মাত্তেও সালভিনির লিগ এবং সিলভিও বারলুসকোনির ফোরজা ইতালিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ডানপন্থী সরকার গঠন করতে পারে দলটি। এর মধ্য দিয়ে সুইডেনের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থীদের জয়ের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ইতালিও ডানপন্থী সরকার পেতে যাচ্ছে।

ইতালিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ গতকাল রবিবার গ্রিনিচ মান সময় ভোর পাঁচটায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায়) শুরু হয়ে চলে গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা)। এই সময়ে ৫ কোটির বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেল্লা সিসিলিয়ান রাজধানী পালেরমোতে ভোট দিয়েছেন। মেলোনি ভোট দিয়েছেন মিলানে এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য-বামপন্থী নেতা এনরিকো লেত্তা রোমে ভোট দিয়েছেন। এদিকে ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভোট বন্ধ হওয়ার সময় নাটকীয়ভাবে ভোটের হার কমে হয় ৬৪.৭ শতাংশ। সিসিলিসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় ভোটের পরিমাণ বেশ কম ছিলো।

ইতালি ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ফলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ নির্বাচনের দিকে সতর্ক নজর রাখছে।

এ নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থীরা জয় পাবে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিলো। বুথ ফেরত জরিপের তথ্যে এ আভাস সত্য হবে বলেই প্রমাণ মিলেছে। অবশ্য, নির্বাচনে জিতলেও মেলোনিই ইতালির প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না সেটি নির্ভর করছে দেশটির প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর।

ইউরো অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি করোনা মহামারির চাপ থেকে ঘুরে দাঁড়ালেও দেশটি এখনো মোট দেশজ উৎপাদনের ১৫০ শতাংশ সমমূল্যের ঋণে জর্জরিত। নির্বাচনী প্রচারণায় মেলোনি নিজেকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত বলে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া 'ঈশ্বর, দেশ ও পরিবার' - এ আদর্শকে সামনে রেখে ৪৫ বছর বয়সী মেলোনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।

বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর পর্যবেক্ষণ বলছে, ইতালির প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য মেলোনি নিজের ভাবমূর্তিকে নরম ও সংযত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আগের অবস্থান থেকে সরে এসে তিনি ইউক্রেনের ওপর সমর্থন বাড়িয়েছেন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-বিরোধী বক্তব্যও অনেক কমিয়েছেন। ফলে, মেলোনির ডানপন্থী সরকার ক্ষমতায় এলে নানা কারণেই ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে ইতালির ভূমিকা ইউরোপে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউরোপিয় ইউনিয়ন নিয়ে সংশয়বাদী মনোভাব পোষণ করলেও ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন মেলোনি। তবে তার রাজনৈতিক মিত্রদের অবস্থান এ ব্যাপারে ভিন্ন। মেলোনির মিত্র সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক মাত্তেও সালভিনি এবং আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ডানপন্থী নেতা সিলভিও বারলুসকোনির সঙ্গে রাশিয়ার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বারলুসকোনির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধুত্ব বেশ পুরনো। সম্প্রতি বারলুসকোনি মন্তব্য করেছেন, পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

মেলোনির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতালিতে শরণার্থীদের সুযোগ-সুবিধা, সমকামীদের অধিকার এবং গর্ভপাতের আইনি অধিকারের মতো বিষয়গুলো প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

আগস্টের শুরু পর্যন্ত ইতালির বাম ও মধ্যপন্থী দলগুলো জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জোটের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার আভাস দিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ায় মেলোনির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একা হয়ে পড়েন মধ্য-বামপন্থী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এনরিকো লেত্তা।

সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন ও ইত্তেফাক।