রাজনীতি

রাফায় হামলা

গাজার গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পথ খুলে দেওয়ার দাবি ইসরায়েলের

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৮ মে ২০২৪;  আপডেট: ২৩:১৫, ৮ মে ২০২৪

গাজার গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পথ খুলে দেওয়ার দাবি ইসরায়েলের

রাফায় হামলা চালানোর আগে ফিলিস্তিনিদের এ এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সীমান্ত পথ খুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আজ বুধবার দেশটির তরফ থেকে দাবি করা হয়। একইসময় চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই নতুন করে গাজার দক্ষিণের শহর রাফায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের জন্য নির্ধারিত একটি বোমার চালান বাতিল করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো  হয়েছে। মূলত, রাফায় হামলা চালানো হতে পারে, এ আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক জেষ্ঠ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান।

গাজা উপত্যকা থেকে গত রবিবার হামাসের চালানো রকেট হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। এর পরদিন সোমবারই রাফা শহরে হামলা চালায় ইসরায়েল। একইসঙ্গে, এ শহরের কাছের কারেম আবু সালেম বা কেরেম সালোম নামের সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেয় দেশটি।

পরদিন মঙ্গলবার রাফার ফিলিস্তিন অংশ দখল করে ইসরায়েলি সেনারা। একইসঙ্গে, এ এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করাসহ হতাহতদের এলাকা ত্যাগের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

বর্তমানে এই সীমান্ত পথই খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও, বুধবার দিন পর্যন্তও এ সীমান্ত পথের বাইরে ত্রাণের ট্রাকগুলোকে সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

এভাবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার সব সীমান্তের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘রাফার সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী এবং জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে, হাজার হাজার আহত রোগীকেও তারা সীমান্ত পার হতে দিচ্ছে না।’

গতকাল মঙ্গলবার কমপক্ষে ৪৬ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য সীমান্ত পার হওয়ার দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু, তাদের যেতে দেওয়া হয়নি বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ করা হয়।

তবে, রাফায় হামলা চালানোর আগে এখানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে শহরটি খালি করায় নির্দেশ দেয় ইসরায়েল। না হলে তাদের নিহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে দেশটির তরফ থেকে সতর্ক করা হয়।

এ অবস্থায় রাফায় হামলা চালানোর পর অনেকে গাজার মধ্যবর্তী শহর দেইর এল- বালাহতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু, এর মধ্যেই ৩৫ জন নিহত ও ১২৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাফায় সচল গুটিকয়েক হাসপাতালের মধ্যে একটি কুয়েতি হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, বুধবার রাফার পূর্বাঞ্চলের আস-সালাম এলাকায় নতুন করে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। আরও হামলার আশঙ্কায় বর্তমানে এ এলাকার প্রধান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আল-নাযার হাসপাতাল খালি করে দিয়ে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সেখানকার কর্মীরা।

তবে, ইসরায়েল রাফায় হামলা চালালে তা ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাস সতর্ক করেছিলেন। একইসঙ্গে, তা এলাকার শিশুদের জন্য মরাত্মক বিপর্যরকর হবে বলে ইউনিসেফ থেকেও সতর্ক করা হয়।

এ বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছিলেন, ‘রাফা এখন শিশুদের শহর, কিন্তু গাজার কোনো এলাকাই এখন আর তাদের জন্য নিরাপদ নয়। এ অবস্থায় রাফাতেও হামলা চালানো হলে তারা শুধু যে সহিংসতার ঝুঁকিতে পড়বে, তা নয়; বরং, এরইমধ্যে শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকা এ শিশুগুলোর জন্য তা হবে মারাত্মক আতঙ্কের।’

রাফায় হামলা চালানো হলে তা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও সতর্ক করা হয়। কিন্তু, ইসরায়েল এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি বলে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের চালান বাতিল করতে বাধ্য হয়। ইসরায়েলের জন্য নির্ধারিত ওই অস্ত্রের চালানে ৯০৭ কেজির মতো বোমা ছিলো বলে দেশটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান।

এদিকে, গাজায় চলমান এ যুদ্ধের মধ্যেই বুধবার সব পক্ষের উপস্থিতিতে কায়রোতে আবারও যুদ্ধ-বিরতি সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়েছে বলে কায়রোভিত্তিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।

এতে যুদ্ধ-বিরতিসহ বন্দী বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনার উপর জোর দেওয়া হবে বলে ওই গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। চলমান এ আলোচনায় মধ্যস্থকারীর উপস্থিতিতে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে এ ধরনের আরেকটি আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধ-বিরতিতে সম্মত হয়েছিলো। সে সময় হামাসের পক্ষ থেকে ১০৫ ইসরায়েলি বন্দীকে ও ইসরায়েলের কারাগার থেকে প্রায় ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়।

তবে, হামাসের কাছে আরও ১২৮ ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে এবং এদের মধ্যে খুব সম্ভবত ৩৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি।