রাজনীতি

বিক্রমাসিংহেই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২১ জুলাই ২০২২;  আপডেট: ০১:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০২২

বিক্রমাসিংহেই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট

ক্যাপশন : নির্বাচিত হলেও জনগণের কাছে বেশি আস্থাভাজন নন বিক্রমাসিংহে। ছবি : রয়টার্স।

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তিনি শপথ নিলেন। আশা করা হচ্ছে, নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সফল হবেন। তবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় তার শপথ গ্রহণের পর দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়েছেন বিক্রমাসিংহের প্রতিদ্বন্দ্বী দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা। এ কথা জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহে জনতার দুর্ভোগের কথা শুনবেন।

আজ সংসদ ভবনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শপথ নেন ৭৩ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহে। এর আগে তিনি একাধিকবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চলমান সঙ্কটের কারণে গণবিক্ষোভের মুখে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা দুই ভাই গোতাবায়া ও মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগে বাধ্য হন এবং দেশ ছেড়ে পালান। এরপর বিক্রমাসিংহে অস্থায়ীভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর দেশটির পার্লামেন্ট তাকেই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করলো।

তবে শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে রনিল বিক্রমাসিংহ তেমন জনপ্রিয় বা গ্রহণযোগ্য নন। জনগণ মনে করে, সম্প্রতি পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ও তার ভাইয়েরই অনুসারী বিক্রমাসিংহে। এ কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, দেশটি নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করলেও চলমান বিক্ষোভ ও অচলাবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।

বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহেকে ক্ষমতাধর রাজাপাকসে পরিবারেরই ছায়া হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিক্রমাসিংহে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি রাজাপাকসের বন্ধু নই, আমি জনগণের বন্ধু।' তবে তিনি সতর্ক করেছেন, সমস্যা তৈরির চেষ্টা করলে তা বে-আইনি কাজ হবে এবং তিনি এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।

অবশ্য বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, তারা বিক্রমাসিংহকে একটা সুযোগ দিতে চান।

এক বিক্ষোভকারী একটি বার্তা সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'তিনি (বিক্রমাসিংহে) নির্বাচিত হয়েছেন এবং আমরা দেখবো তিনি কী করেন। আমরা যদি খাবার আর ওষুধ না পাই, তাহলে আবারো রাজপথে নামবো।'

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রায় দুই কোটি ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। টানা কয়েকমাস ধরে সেখানে চলছে খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সঙ্কট। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সাথে ব্যাংকিং ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে সাধারণ মানুষ। গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখল করে নিয়েছিল দেশটির জনগণ। এরপরই নতুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় এবং বুধবার পার্লামেন্টে ভোট হয়। নির্বাচনে বিক্রমাসিংহের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা। তার প্রতি জনগণ এবং বিরোধীদের একটি বড় অংশের সমর্থন ছিলো। গত সপ্তাহে তিনি সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের আবেদন জানিয়েছিলেন।

আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিরোধী দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। তবে বুধবার তিনি আলাহাপ্পেরুমার প্রতি তার সমর্থন জানান। নির্বাচনের আগে ১৯ জুলাই এক টুইট বার্তায় তিনি শ্রীলঙ্কার সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্যে ভারতের সহযোগিতা চান। সেখানে তিনি আশা প্রকাশ করেন, যে-ই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোক না কেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজনৈতিক সব দল এবং ওই দেশের জনগণ যেন শ্রীলঙ্কার সঙ্কট সমাধানে পাশে দাঁড়ায়।

সূত্র : বিবিসি, ডয়চে ভেলে, বাসস ও আজকের পত্রিকা।