ট্রাম্পের শরণার্থী বিষয়ক পরিকল্পনা
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দঃআফ্রিকা ছাড়ছে শ্বেতাঙ্গ নাগরিকরা
রাজনীতি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০০:৫৬, ১৪ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:১৩, ১৪ মে ২০২৫

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে উপস্থিত দেশটির বেশ কিছু আফ্রিকানার। ছবি : আরএনজেড।
দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছে। গত রবিবার দেশটির রাজধানী জোহানেসবার্গ থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রকল্পের আওতায় শরণার্থী পদমর্যাদায় তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পাঠানো একটি বিমানে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম দফায় ৪৯ জন শ্বেতাঙ্গ নাগরিককে দেশটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোলেন মিসাইবি এ তথ্য জানান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনুমোদিত আবেদনপত্রের ভিত্তিতে আফ্রিকানারদের (দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ নাগরিক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে স্থানান্তর করা হচ্ছে।’
শরণার্থীদের এ দলটি প্রথমে ওয়াশিংটন হয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে যাবে বলে মিসাইবি জানান।
এদিকে, দেশটির ১২টি অঙ্গরাজ্য আফিকানারদের তাদের রাজ্যে বসবাসে সম্মতি দিয়েছে বলে মার্কিন গণমাধ্যম এনপিআর জানায়। এসব অঙ্গরাজ্যে আরও আগে থেকেই আফ্রিকানারদের পরিবার বসবাস করছে।
ট্রাম্প কেন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের আশ্রয় দিচ্ছেন?
কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা সবসময় নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে বলে ট্রাম্পসহ তার প্রধান পরামর্শক এলন মাস্ক দাবি করে আসছেন। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্কও আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া শ্বেতাঙ্গ। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
তবে, বাস্তবতা হচ্ছে ৩০ বছর আগে অ্যাপারথেইড ব্যবস্থার অবসান হলেও এখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় এই আফ্রিকানাররাই সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী নাগরিক।
কারণ, তারা দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ হলেও দেশটির প্রায় ৭৮ শতাংশ কৃষি জমির মালিকই এ শ্বেতাঙ্গরা। এমনকি, তাদের এ সম্পদের পরিমাণ স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।
তা সত্ত্বেও এবার ক্ষমতা গ্রহণের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এ আদেশে মূলত আফ্রিকানার শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের প্রস্তাব করা হয়। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার কর্তৃক সম্পদ ও জাতিগতভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এখানে ট্রাম্প মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার জমি বাজেযাপ্তকরণ সংক্রান্ত একটি আইনের উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এ আইনের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে দেশটির শ্বেতাঙ্গদের অধিকার খর্ব করা হবে।
তবে, এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষতিপূরণ দিতে, যারা সাবেক অ্যাপারথেইড ব্যবস্থার আওতায় ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলো।
কতো সংখ্যক আফ্রিকানার যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হতে যাচ্ছে?
চলতি বছরের মার্চেই পুনর্বাসনের জন্য আফ্রিকানারদের মধ্য থেকে প্রায় ৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার জন এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হবে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তবে, এর পর এখনও নতুন আর কোনো আবেদন জমা পড়েনি বলে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোলেন মিসাইবি জানান।
এদিকে, এতো সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও অন্য যে কোনো দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সুবিধা পেতে নাগরিকদের অনেক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে সময় লেগে যায় বেশ কয়েক বছরের মতো।
তবে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ট্রাম্প সর্বপ্রথম যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, সেখানে অন্য যেকোনো দেশ থেকে শরণার্থী নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আফ্রিকানাররা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী যাদের একটি বড় অংশ ডাচ, জার্মান ও ফরাসী ঔপনিবেশিকদের বংশধর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ আফ্রিকানারদের তৎকালীন নেতারা ওই অঞ্চলে গিয়ে তাদের আধিপত্য কায়েম করে।
সে সময় অ্যাপারথেইড নামের নৃশংস বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়ে তারা সমাজে কৃষ্ণাঙ্গদের থেকে শ্বেতাঙ্গদের আলাদা করতে শুরু করে। ফলে, কৃষ্ণাঙ্গরা ওই অঞ্চলের আদিবাসী হয়েও নিষ্ঠুর এ নিয়মের কবলে পড়ে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গদের দাস হিসেবে নির্মম জীবনযাপন করে।
পরবর্তীতে, নেলসন ম্যান্ডেলাসহ সমসাময়িক আরও কিছু বিপ্লবী নেতার কঠোর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ এ বৈষম্যের অবসান ঘটে।
বর্তমানে দেশটিতে বসবাস করা শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের প্রায় ৬০ শতাংশ আফ্রিকানার।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।