স্বদেশ

দ্রুত এসে দ্রুতই চলে গেলো সিত্রাং

রেখে গেলো ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন

স্বদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৬ অক্টোবর ২০২২;  আপডেট: ১১:১৯, ৩১ অক্টোবর ২০২২

দ্রুত এসে দ্রুতই চলে গেলো সিত্রাং

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিধ্বস্থ ঘরবাড়ি।

বঙ্গোপসাগরে গত বৃহস্পতিবার একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী তিনদিনে তা ক্রমান্বয়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।  শেষে গত সোমবার এটি পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে। পরবর্তীতে গত চারদিনের সব অনুমান-পূর্বাভাসের অবসান ঘটিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় প্রথমে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে। কিন্তু এর মাত্র তিন ঘণ্টা পরেই এর কেন্দ্রভাগ উপকূলে চলে আসে এবং পরবর্তী পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা উপকূল অতিক্রম করে দেশের মধ্যভাগ হয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। আর স্থলভাগে প্রবেশ করে এরইমধ্যে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়া ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল মঙ্গলবার আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের আসামের দিকে চলে যায়। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টির পর ধীরে ধীরে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও ঘূর্ণিঝড়টি সারা দেশজুড়েই রেখে গেছে অনেক ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।

সোমবার সন্ধ্যায় ভোলা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবেশ করে খুলনা হয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আঘাত করে। এসময় এসব এলাকা অতিক্রম করার সময় প্রচুর বৃষ্টি ও প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসের কারণে উপকূলের কিছু কিছু এলাকায় পাঁচ থেকে আট ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় পটুখালির খেপুপাড়ায় ২৯৪ মিলিমিটার। বড় বড় গাছপালা ভেঙ্গে সড়ক অবরোধ হওয়াসহ ফসল ও মাছের ঘেরেও ব্যপাক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে উপকূলের একটি বড় অংশ অনেক সময় ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। এখনও এসব এলাকার কিছু অংশ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

এমনকি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে সড়কে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়াসহ রাস্তায় বড় বড় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। এভাবে ঢাকাসহ উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলে গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙ্গে এবং নৌকা ডুবে এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।  
 
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রংপুর বিভাগ ছাড়া মোটামুটি সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের এবং ভারি বৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিও হয়। এর মধ্যে রবিবার দিবাগত রাতে ঢাকায় হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টির মাত্রা। সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয় ঢাকায়। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য, প্রথম থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো এ নিম্নচাপটি। বার বার বদল করছিলো এর অবস্থান। প্রথম দিকে এটি ভারতের পশ্চিবঙ্গে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হলেও খুব দ্রুত পাল্টে যায় এ পরিস্থিতি। পরে এটি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে বলে রবিবার পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেলেও ঝড়টির মূল কেন্দ্র কখন বা কোন মাত্রায় আঘাত করবে, এ সম্পর্কে বার বারই সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছিলেন আবহাওয়াবিদরা। মূলত সিত্রাংয়ের অস্বাভাবিক আচরণের কারণেই এ পরিস্থিতির  সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত এটি প্রবল ঝড়ে রুপ নিয়ে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর ছয়টার মধ্যে দেশের উপকূলে আঘাত করবে বলে পূর্বাভাস দেন আবহাওয়াবিদরা। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায়ই সিত্রাংয়ের  অগ্রভাগ প্রচন্ড গতিতে উপকূলে আঘাত করে। আর এর মাত্র দুই ঘণ্টা পরই এর কেন্দ্র চলে আসে উপকূলে।
 
এ অবস্থায় মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অতি দ্রুত অগ্রসর হয়ে ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। এটি উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক আকারে বৃষ্টি ঝরিয়ে দ্রুত দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং পরে এটি স্থল নিম্নচাপ আকারে ঢাকা-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়টি স্থল নিম্নচাপ আকারে ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপর দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আসামের দিকে চলে যায়।

এদিকে আগামী ডিসেম্বরে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সে অনুযায়ী এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সূত্র : বাসস।