ফিচার ও মতামত

বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদন

রাষ্ট্রকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে

নুসরাত জাহান

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৮ জুলাই ২০২৫;  আপডেট: ২২:৫০, ২৮ জুলাই ২০২৫

রাষ্ট্রকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে

মর্মান্তিক এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আর দেখতে চাই না।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ভয়াবহ এ ঘটনার দৃশ্যগুলো দেখে রীতিমতো আতঙ্ক বোধ করছি। মা-বাবার আহাজারি, শিশুদের আর্তনাদ আর বেঁচে ফেরা সহপাঠীদের ভয়ার্ত চেহারা দেখে স্বাভাবিক থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

দুর্ঘটনার পর এ নিয়ে নানা জন নানা মত দিয়ে চলেছে। কেউ বলছে, জনবহুল এলাকায় কেন যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ হয়। কেউ বলছে, রানওয়ের পাশে কেন স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাস করা হলো। এ ছাড়া, প্রশ্ন উঠছে- এতো পুরাতন বা ত্রুটিপূর্ণ প্লেন দিয়ে কেন প্রশিক্ষণ করানো হচ্ছে? কেন ওড়ার কয়েক মিনিটের মাথায় 'যান্ত্রিক ত্রুটি' দেখা দিলো? কেন ওড়ার আগে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো না? অনেকে আবার একে 'রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র' বলে দাবি করছে এবং এরইমধ্যে এর পক্ষে-বিপক্ষে দল-মত-যুক্তি দাঁড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশে এসব অবশ্য ব্যতিক্রম কিছু নয়। প্রতিবারই বড় কোনো দুর্ঘটনার পর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে এর বাস্তবিক সমাধানের বদলে বরং অর্থহীন এসব তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে ঠোকা হয় একেকটা ট্রাজেডির কফিনের শেষ পেরেক!

কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে - ঢাকার পুরোটাই ঘনবসতিপূর্ণ। আর, প্লেনগুলো প্রতিনিয়তই উড়ে যাচ্ছে আমাদের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ওপর দিয়েই। এর মধ্যে কোনো-একটি যে আবারও কোনো ভবনের ওপর আছড়ে পড়বে না, এর কোনও নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবে?

শুধু মাইলস্টোন নয়; দেশে যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিনিয়তই ঘটে আরও নানা দুর্ঘটনা - কার্যত যেগুলোর কোনো সমাধান চোখে পড়ে না। মেয়াদোর্ত্তীণ ও অবৈধ যানবাহন, বেপরোয়া গতি এবং চালকের বৈধ লাইসেন্স, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্বের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা; নিয়ম মেনে বাড়ি না বানানোয় ভবন ধসে মৃত্যু; গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, অবৈধ গ্যাসলাইনে লিকেজ, অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্ট, পরিকল্পনাহীন ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকা অবৈধ কারখানায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এ থেকে উত্তরণের কি কোনো উপায় নেই? মর্মান্তিক এসব ঘটনার গভীরতা উপলব্ধি করে আমরা কি একটু সংবেদনশীল হতে পারি না?  

সংবাদপত্রের পাতায় আর টিভি পর্দায় দেশের সম্ভাবনাময় ও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর শিশুদের আমরা দেখতে চাই ভবিষ্যতের মেধাবী, সফল মানুষ হিসেবে। সকালে স্কুলে গিয়ে, সারাদিন ক্লাসে পড়াশোনা করা শিশুটি স্কুল ছুটির এক ফাঁকে টিফিন খাওয়া কিংবা খেলার মাঝখানে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার আগুনে ঝলসে যাবে - মর্মান্তিক এ ঘটনা আমরা আর কখনোই দেখতে চাই না।

আমরা দেখতে চাই, এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনায় রাষ্ট্র জনগণের পাশে দাঁড়াবে। এসব দুর্ঘটনার দায়ভার স্বীকার করে এর সঠিক কারণ খুঁজে বের করবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করাসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য দেশকে নিরাপদ করবে। সেই আগামীর আশায় আমরা অপেক্ষমান।

মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে প্রাণ হারানো আমাদের সন্তানতুল্য শিশুরা - যেখানেই আছো, ভালো থেকো তোমরা... আমরা তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।