অন্যান্য

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভ‍ূমিকম্পে নিহত অন্তত ৪৬,৫৩০

বেশিরভাগ স্থানে উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্তির ঘোষণা তুরস্কের

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩;  আপডেট: ২৩:৫৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বেশিরভাগ স্থানে উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্তির ঘোষণা তুরস্কের

ধ্বংস হয়েছে বেশিরভাগ স্থাপনা। কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে গুটিকতক ভবন। এগুলোর বেশিরভাগ সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন করে নির্মাণই এখন দেশদুটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বেশিরভাগ এলাকায় চলমান উদ্ধারকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে তুরস্ক। তবে শুধু তুরস্কের কাহরামানমারাস এবং হাতায়ে প্রদেশে সীমিত পরিসরে কাজ চলমান থাকবে। গতকাল রবিবার রাতে দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে আজ সোমবার পর্যন্ত দেশদুটিতে ভূমিকম্পে নিহতের মোট সংখ্যা এ পর্যন্ত অন্তত ৪৬ হাজার ৫৩০ জন বলে জানিয়েছে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু।

বর্তমানে শুধু তুরস্কের কাহরামানমারাস এবং হাতায়ে প্রদেশের ৪০টি ভবনে উদ্ধার তৎপরতা চলমান থাকবে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান ইউনুস সেজেরের বরাত দিয়ে আনাদোলু এ তথ্য জানায়।

ইউনুস সেজের বলেন, 'তুরস্কে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬৪২ জন। তবে দেশটির বেশিরভাগ প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হচ্ছে।'

তবে ভূমিকম্পের পর এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে অনেককে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্প আঘাত হানার ২৯৬ ঘণ্টা পর হাতায়ে থেকে এক দম্পতিসহ তাদের ১২ বছরের এক সন্তানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তবে পরে শিশুটি মারা যায় বলে জানায় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু।

এদিকে তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ গৃহহীন হয়েছে। আর ভয়াবহ এ দুর্যোগে দেশদুটির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেশ কয়েক কোটি ডলার বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের এ ভয়াবহতার উল্লেখ করে সেজের বলেন, 'আমরা সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় একটি দুর্যোগ দেখলাম। এ ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্প পরবর্তী যে অভিঘাত, তার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি প্রদেশে আর সীমাবদ্ধ নেই।'

এর মধ্যে তুরস্কের হাতায়ে প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রদেশটির মেয়র লুৎফু সাওয়াস। ওই এলাকার ৮০ শতাংশেরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়ে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে বলে জানান তিনি।

তুরস্কের টেলিভিশন চ্যানেল হাবেরতুর্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়র সাওয়াস বলেন, 'আমাদের জরুরি ভিত্তিতে আরও তাবুর প্রয়োজন। আরও এক মাস এখানে শীত থাকবে। মানুষজন এখন বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছে, কিন্তু তারা তাদের পোষা প্রাণীটিও ফেলে যেতে চাইছে না, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা।'

বর্তমানে তুরস্কের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৯৪টি ভবন হয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দেশটির পরিবেশ ও নগরায়ন সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এর সবই ছিলো আবাসিক ভবন এবং এখন এগুলো পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিতে হবে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বর্তমানে তুরস্ক ও সিরিয়ার প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ বাসিন্দার এখন মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে।

তুরস্ক এবং সিরিয়া উভয় দেশই ভূমিকম্পে সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমানে এসব এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং সুপেয় পানির অভাবে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ ছাড়া আশ্রয় শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে লোকজন থাকার কারণে নানা ধরনের রোগ সংক্রমণেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তুরস্কে পৌঁছার পরপরই উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্তের ঘোষণা দিলো দেশটি। মূলত ন্যাটোভুক্ত দেশটির এ দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকতেই তার এ সফর বলে দেশটি জানায়। একইসঙ্গে এ সময় ব্লিঙ্কেন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সাহায্যের ঘোষণাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
 
নতুন এ সাহায্য খুব দ্রুতই পৌঁছানো হবে উল্লেখ করে এখন উদ্ধার তৎপরতার চেয়ে বরং দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনে মনোযোগ দেওয়া জরুরি বলে সাংবাদিকদের জানান সফররত ব্লিঙ্কেন।

সূত্র : সিএনএন, আল-জাজিরা।